মন্তব্যঃ ইউরোপিয়ান গণতন্ত্র সম্পর্কে আন্দ্রিয়াস কোয়েলের সাক্ষাৎকার

জার্মানিতে চরম ডানপন্থী দল এএফডির (Alternative für Deutschland) উত্থান নিয়ে জার্মানির প্রাক্তন সাংবিধানিক আদালতের প্রেসিডেন্ট/প্রধান আন্দ্রিয়াস ফসক্যুলে (Andreas Foßkuhle) এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে। এ ধরণের সাক্ষাৎকার ক্লান্তিকররকমের একঘেয়ে হলেও আন্দ্রিয়াস বেশ কিছু আগ্রহউদ্দীপক মন্তব্য করেছেন। রাজনৈতিক সাক্ষাৎকারে তত্ত্বালোচনা তেমন চোখে পড়ে না। আন্দ্রিয়াস এটা করেছেন বেশ ভালোভাবেই।

Copyright: Sandro Halank, Wikimedia Commons, CC-BY-SA 3.0, CC BY-SA 3.0

আন্দ্রিয়াস অভিযোগ করেছেন চরম ডানপন্থী দলটি রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামো বদলানোর চেষ্টা করছে। তিনি এই আশঙ্কার কথা উল্লেখ করছেন এমন একটা সময়ে যখন জাক্সেন (Sachsen), থ্যুরিংগেন (Thüringen), ও ব্রান্ডেনবুর্গের (Brandenburg) জনমত জরীপে এএফডি পরিষ্কার ফেভারিট। উল্লেখ্য, এই তিনটি রাজ্যে সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ নির্বাচন হবার কথা।

Voßkuhle hält den Fortbestand der Demokratie in Deutschland für nicht gesichert. “Es kann durchaus sein, dass sich unsere westliche Demokratie nur als eine kurze Phase in der Geschichte der Menschheit erweist, ähnlich wie die attische Demokratie, und danach wieder die dunkle Zeit des Totalitarismus zurückkehrt”, sagte er.

ইউরোপে চরম ডানপন্থী দলগুলোর উত্থানে আন্দ্রিয়াসের মতো অনেকেই গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি হিসেবে দেখছেন। আন্দ্রিয়াস এক কাঠি উপরে গিয়ে ইউরোপীয় গণতন্ত্রের পরিণতি এথেনিও গণতন্ত্রের মতো হবে বলে আশঙ্কা করেছেন। এথেনিও গণতন্ত্র যেরকম অটোক্রাটিক রেজিমের হাতে পড়েছিল সেরকম বর্তমান ইয়োরোপীয় গণতন্ত্রও একই পরিণতি ভোগ করতে পারে এরকমটাই বলেছেন আন্দ্রিয়াস।

dass längst nicht alle Wähler der AfD Rechtsextreme und Antisemiten seien. “Sicher, viele sind anfällig für Verschwörungstheorien und populistische Parolen, das sind aber keine neuen Phänomene; beides gibt es seit Jahrhunderten”, sagte der 60-Jährige. Er halte auch nichts von Lager-Theorien. “Es ist vielfältiger, komplizierter, verwobener. Es gibt nicht ‘den’ AfD-Wähler.”

N-TV.de

এএফডির জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও আন্দ্রিয়াস বলছেন, এই দলটির সবাই চরম ডানপন্থী এবং অ্যান্টিসেমাইট নন। অনেক সমর্থক বিবদমান এস্টাবলিসমেন্টকে শিক্ষা দেবার জন্যও এফডিপিকে ভোট দিচ্ছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এটা প্রতিবাদী ভোট নামে পরিচিত।

সাক্ষাৎকারে আন্দ্রিয়াস লাগ্যার থিওরির কথা উল্লেখ করে বলেছেন এএফডিকে কোন দলগত জোটের মধ্যেও ফেলা যাবে না। এখানে আন্দ্রিয়াস লাগ্যার থিওরি বলতে কী বুঝিয়েছেন সেটা আমার কাছে পরিষ্কার না। লাগ্যার বা ক্যাম্প থিওরির একটা ব্যাখ্যা সুজান জনটাগের লেখায় পাওয়া যায়। সুজান জনটাগ (Susan Sontag) জার্মান লাগ্যার (Lager) (ইংরেজিঃ Camp) বলতে বুঝিয়েছেন –

.. certain mode of aestheticism, a different way of seeing the world, as an aesthetic phenomenon. But camp is not only a different view on a subject but also a quality that can be attributed to a lot of different subjects; clothes can be camp, but also books, people, and furniture.

The Theory of Camp: Rodrigo Costa Ribeiro (2022)

তবে আন্দ্রিয়াসের ক্যাম্পের ধারণাটা সম্ভবত জার্মানি/অস্ট্রিয়াতে যেটা Lagertheorie বলে পরিচিত। এই তত্ত্ব ৫০এর দশকে অ্যাডাম ভান্ড্রুস্কা অস্ট্রিয়ার রাজনৈতিক জোটগুলোকে শ্রেণীবদ্ধ করতে ব্যবহার করেছেন। জার্মানিতে এই শ্রেণী এখন অনেকটাই তরল। প্রধান দলগুলো অর্থাৎ সিডিইউ/সিএসইউ, এসপিডি, এফডিপি, গ্রিন মিলেমিশে রাজ্য, ফেডারেল লেভেলে সংসার (পড়ুন, সরকার) চালায়। সবচাইতে জনপ্রিয় দলের প্রধান ফ্রিড্রিশ ম্যার্তস (Friedrich Merz) মিউনিসিপ্যাল পর্যায়ে এএফডির সাথে জোট করার সম্ভাবনার কথাও বলেছেন। ম্যার্তসের বক্তব্য নিজের দলেই সমালোচিত হলেও সম্ভাবনাটা একদম আলোচনার টেবিলের বাইরে একথা জোর দিয়ে বলা যায় না।

আন্দ্রিয়াসের সাক্ষাৎকার পড়ে কিছু চিন্তা মাথায় এলো। যেমন,

১। প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিপরীত দলকে ভোট দেয়া সব দেশেই কমবেশি দেখা যায়। এএফডির চরম ডানপন্থি মনোভাব দেখেও জনগণের মধ্যে যারা তাদের ভোট দিচ্ছে/দিয়েছে/দেবে তাদের মধ্যে ঘৃণার একটা সাধারণীকরণ ঘটেছে একথা বলা যায়। একে ঠেকাতে অন্য বড় দলগুলোর মধ্যে জনতুষ্টিমূলক কথা বলা ও কাজ করার প্রবণতা বাড়ছে। অর্থাৎ ওরা একধরণের ছোট এএফডি হয়ে উঠতে চাইছে। এএফডি নিজে একটি ক্যাম্প বা ক্যাম্পের অংশ হয়ে উঠতে না পারলেও এরা সমগ্র জার্মানির রাজনৈতিক আচরণে প্রভাব ফেলছে। মূলধারার দলগুলোর অব্যাহত ডানদিকে ঘেষার প্রবণতা এএফডিকে কোন এক ল্যাগারের/ক্যাম্পের ছায়াতলে দীর্ঘমেয়াদি অবস্থান এনে দিতে পারে।

২। এএফডি ইমিগ্র্যান্ট বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত। জার্মানির ইমিগ্র্যান্টরা যারা মোট জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ, কীভাবে ভোট দিচ্ছে? এই ইমিগ্র্যান্টদের সবচেয়ে বড় গ্রুপ মুসলিম। এরপরে প্রাক্তন সোভিয়েত রাষ্ট্র থেকে আসা জনগণ। প্যালেস্টাইন, ইউক্রেইন প্রসঙ্গে তারা মতামত দেবার মতো স্বাচ্ছন্দ্য পরিবেশে তারা নেই। তারা এই দমবন্ধ পরিবেশে প্রতিবাদি ভোট হিসেবে এএফডির পাল্লায় ঝুঁকবে (যে দলটি খোলাখুলিভাবে ইমিগ্র্যান্টদের উপরে খড়গহস্ত) এরকম সম্ভাবনা খুব কম। এরা তাহলে কী করবে? ভোট বর্জন করবে?

আন্দ্রিয়াস বলছেন,

Wer das nicht möchte, sollte sich für unsere Demokratie engagieren. Das Leben in einer Demokratie war nie ein Paradies. Aber das Leben in totalitären Regimen war und ist in vielfältiger Hinsicht deutlich schlechter.

N-TV.de

ঠিক, তবে ভোটাররা গণতন্ত্র থেকে কী পেল সেই প্রশ্ন করতে পারে। তারা এখনকার সিস্টেমে বীতশ্রদ্ধ মানে এই নয় যে তারা অটোক্র্যাটিক কিছু চায়। জার্মানির মূল ধারার রাজনীতিতে এই বাইনারি চিন্তাধারা খুব জনপ্রিয়। স্ট্যাটাস কোকে প্রশ্ন করা যাবে না। বিশেষ করে সেই প্রশ্ন যদি অন্যেরা (the other) করে।

  1. সুজান জনটাগের মূল লেখাতই পড়ুন এখানেঃ Notes on “Camp”: Susan Sontag (1964)
  2. The Theory of Camp: Rodrigo Costa Ribeiro (2022)
  3. Voßkuhle: “Westliche Demokratie vielleicht nur kurze Phase”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *