শিরোনাম লিখতে গিয়ে ভাবছিলাম একটা ভালো অপমানকে কীভাবে ভালো বলা যায়। ভালো বা উৎকৃষ্ট অপমান এরকম এক ধরণের অপমান যেটা শুনে অপমানিত হবার বদলে মুগ্ধ হবার মতো একটা ব্যাপার ঘটে।
সম্প্রতি ফেসবুকে “Switzerland Probashi” নামে একটা পেইজ বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। এটা একটা স্যাটায়ার পেইজ। ধারণা করি প্রবাসী বাংলাদেশিদের যে অংশটি সারাক্ষণ দেশকে গালি দেন এবং সেই সাথে প্রবাসে যে দেশে থাকেন সেটার সাথে তুলনা করে নিজের অবস্থান সন্তুষ্ট করেন তাদের ব্যঙ্গ করতে এই পেইজের জন্ম। কাজটা ভালো হচ্ছে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। এই পেইজে কয়েকজন সুইজারল্যান্ড প্রবাসী বিভিন্ন নামে লেখালেখি করেন। সেখানে তারা দেশে থাকা দেশিদের হেয় করে কথাবার্তা বলেন। সুইজারল্যান্ডে যারা নতুন গিয়েছেন এবং এখনও তেমন গুছিয়ে উঠতে পারেননি। তারাও এখানে হেনস্থার শিকার হন। হেনস্থা করা অপমান করার কিছু উদাহরণ দেখা যাক,
বাংলাদেশ থেকে যারা আমাদের পেজ ফলো করেন, আপনাদের বাসায় লাইনের গ্যাস না থাকলে দয়া করে আর আমাদের পেজে ঢুকবেন না। সিলিন্ডারওয়ালা লোকদেরকে এই পেজে এলাউ করা হবেনা। ধন্যবাদ
আবুল কালাম, প্লাম্বার
সুইজারল্যান্ড প্রবাসী
যারা স্টুডেন্ট ভিসা এবং স্পাইস ভিসায় সুইজারল্যান্ডে আসছেন তারা দয়া করে আজকের জুম্মায় পিছনের কাতারে দাঁড়াবেন। প্রথম কাতার শুধু সিটিজেন এবং সমিতিভুক্ত প্রবাসীদের জন্য। ধন্যবাদ।
জাকারিয়া এম চৌধুরী
সুইজারল্যান্ড নাগরিক
থিতু হওয়া প্রবাসীদের নিয়ে এরকম স্যাটায়ার আগে চোখে পড়েনি। প্রায় দুই দশক প্রবাসে কাটানোর অভিজ্ঞতায় এরকম থিতু হওয়াদের অন্যদের ছোট করতে কম দেখিনি। এদের চেহারাটা এই পেইজের মাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে এটা ভালো কথা।
এই পেইজে প্রবাসীদের বক-ধার্মিক চেহারাটাও দেখিয়েছি খুব ভালোভাবে
একটা কঠিন দিন গেল আজকে। আমরা প্রবাসী ভাইরা মিলে নতুন বছরের পার্টি দিমু। সকালে বাইর হয়ে দেখি পাকিস্তানিদের মাংসর দোকান সব বন্ধ। যেদিকে যাই সেদিকেই ছাটার নামানো। অন্য দোকানেও গরুর গোস ছিল কিন্তু ওইগুলি হালাল না। পরে আরো ৮ টাকা বাস ভাড়া দিয়ে মামুন আর আমি দুই ভাই মিলে ৩ কিলু দুরে গেলাম সিটি সেন্টারে। ওইখান থেকে মাংস কিনে জাকারিয়া ভাইর বাসায় আসলাম। ওসমান গণি ভাই আর হারুন ভাই মিলে সয়া সস দিয়ে কালা ভুনা পাকাইলো। খাওয়া শেষে এখন পার্টি শুরু হইছে। আসলে মাঝে মাঝে ইনজয় করার দরকার আছে। জীবন মানেই শুধু কাজ না। এই কথাটা মাইন্ডে রাখবেন। তাইলে আর কখনো মন খারাপ হবেনা। অবশ্য গরিবের কোনো ডিপ্রেশন নাই।
গোলাপ মাহবুব
সুইজারল্যান্ড প্রবাসী
আবার ভাবীরা যে শুধু ভাবী, তাদের কোন নাম থাকে না, স্বামীর নামেই তাদের নাম এটাও দেখিয়েছে।
সুইজারল্যান্ড থেকে আমাদের আজকে সকালের নাস্তা। ওসমান আরবি স্টাইলে মুরগি ভাজছে। আর আলুর ত্রিভুজ বানাইছে। নামটা অবশ্য আমি দিছি। কারন সে কি জিনিস বানাইছে, নাম বলতে পারে নাই। আমি পাশে থেকে দেখলাম। আপুদের জন্য এই আইটেম রান্নার টেকনিকটা লিখে দিচ্ছি। মাঝে মধ্যে রান্না করে হাজবেন্ডকে ভড়কাইয়া দিতে পারেন।
আরবি মুরগি –
১. প্রথমে কাজের লোক দিয়ে সুপারশপ থেকে মুরগির রান কিনে আনাইবেন। বাংলাদেশে নাই হয়ত।
২. ঘরের সব কাজ শেষ হবার পর বুয়ারে দিয়ে ঠান্ডা পানিতে মুরগি ধোয়াইবেন। গরম পানিতে ধোয়া যাবেনা। নাহলে নিজেই ধুইতে পারতেন।
৩. জিরার ফাকি, ধইনার ফাকি, গোলমরিচের ফাকি, কাশমিরি মরিচের ফাকি, লবণ আর চিনি মিলাইবেন। বুয়ারে বলবেন মিক্স করে দিতে। নাহলে আপুদের হাতের স্কিন জ্বলতে পারে আগেই সাবধান করে দিলাম।
৪. বুয়া চলে যাবার পর ফ্রাই প্যান পাতিলে তেল দিয়ে মুরগি দিয়ে দোনোপাশে ৫ মিনিট করে ইনটোটাল ১০ মিনিট ভাজবেন।
৫. পাতিল থেকে উঠিয়ে খাওয়া ধরবেন না। প্লেটে নিয়ে খাবেন।
আলুর ত্রিভুজ কেমনে বানায় তা আরেকদিন বলবো। একবারে দুইটা টেকনিক বললে মাথায় রাখতে পারবেন না। তবে আমার পাঁচবছরের মেয়ের বুদ্ধি আর ব্রেন দেখলে আপনারা অবাক হয়ে যাবেন। একবার যা পড়ে বা শুনে, সেটাই মুখস্ত করে ফেলে। দ্বিতীয়বার আর বলা লাগেনা। ওর মত মেধাবী বাচ্চা আর কারো ঘরে দেখি নাই।
ভাবী, ওসমান গণি
সুইজারল্যান্ড প্রবাসী
এই সকল স্ট্যাটাস থেকে ভালো অপমান করতে পেরেছে এই পেইজের পাল্টা আরেকটা পেইজ। Italian Probashi নামে এই পেইজটি কিছুদিন আগে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছে “সুইজ”দের নিয়ে। এটা এরকম –
সুইজদের নিয়ে একটা জরুরি ঘোষণা
সুইজ দেশ নিয়ে একটা বিষয় ক্লিয়ার করি। আমাদের সাথে সুইজের কোন কামড়াকামড়ি নাই। ম্যাপ দেখলে বুঝবেন আমাদের বগলেই সুইজ বর্ডার। আমরা সুইজকে ছোট ভাই হিসাবে দেখি। ছোট ভাই হিসাবে দেখার পিছনে লজিক আছে। বিদেশ মানেই লজিক। এইখানে লজিক না থাকলে প্রেম পর্যন্ত হয় না আর ভাই ব্রাদার তো অনেক পরের ব্যাপার। যেমন ধরেন সুইজে ইউরোর চল নাই। ইউরো টাকা যেহেতু নাই এরা মূল ইউরুপ না।
এখন বলতে পারেন তাহলে আমরা কেন সুইজকে গণনায় ধরি? এই প্রশ্নের উত্তর অর্থনীতি ছাড়া বুঝা সম্ভব না। ধরেন আপনার বহুত টাকা। এতোই টাকা যে ঝালমুড়ি খাইয়া মুখ মুছেন টাকা দিয়া। এখন আপনার এলাকার একটা ছোট ভাই আপনার পিছনে পিছনে ঘোরে আর আপনার টাকায় ঝালমুড়ি খায়। সে সত্যবাদী। সে আপনারে বলল বড় ভাই মুড়ির ঝোল টাকা দিয়া না মুইচ্ছা আমার কাছে রাখেন। তখন আপনি চিন্তা করলেন অন্য একজন আপনার টাকার হিসাব রাখলে সমস্যা তো নাই। সুইজ হচ্ছে এইরকম একটা ছোট ভাই যারা বড় ভাইদের টাকার হিসাব রাখে। এইজন্যেই দেখবেন সুইজ ভরা ব্যাংক। আপনাদের গুলশান বনানীর লোকজনদের যাদের বেশি টাকা আছে তাড়াও সুইজরে ছোট ভাই বানাতে চায়।
এই সুইজে কিছু প্রবাসী ফেসবুকে লেখালিখি করে। যারা ব্রোফরে কয় বরাপ। বুঝেন এইবার। যাইহোক, এইগুলা মাঝে মাঝে পইড়া আমরা মেস বাড়িতে হাসাহাসি করতাম কারণ আমাগো এতো কিচ্ছা লেখার টাইম নাই। ইউরো কামাইয়া কুল পাই না আবার ফেসবুক পোস্ট কিন্তু যেদিন দেখলাম ওনারা কইতাছে পিজা নাকি সুইজরা বানাইছে। সেইদিন বুঝলাম এরা আমাদের মানইজ্জত নিয়া টান দিবো। কালকে হয়ত কইবো পাস্তাও সুইজদের তৈরি। ইটালিতে সাঁতার দিয়ে ঢোকেন কিছু বলবো না কিন্তু পিজা নিয়া কিছু বলবেন চৌদ্দ শিখের ভিতর কনফার্ম।
আমরা ইটালিয়ান পাসপোর্ট তো আর সাধে পাই নাই। আমাদের দায়িত্ব আছে ইটালি রক্ষা করার। ভুল বলছি কি না! তবে, ওনাদের পোস্টে আপনারা আরো হাসি মেরে দিয়ে আসবেন। গুরুত্বহীন কথায় হাসি মারার জন্যেই ফেসবুক হাসি মার্কা চিহ্ন বসাইছে। আশা করি বিষয়গুলো ক্লিয়ার।
ইটালিয়ান পাসপোর্টধারী প্রবাসীবৃন্দ
বাঙলা ভাষায় এর থেকে উৎকৃষ্ট অপমান আমি এর আগে পড়িনি।